যে কারণে কোচ হিসেবে বিসিবির ‘সেরা পছন্দ’ সিমন্স
প্রায় সাত বছর আগে বাংলাদেশের কোচ হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন ফিল সিমন্স। ঢাকায় এসে বিসিবিতে প্রেজেন্টেশনও দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেবার তাকে মনে ধরেনি বিসিবির। এখন বিসিবিই তার দুয়ারে কড়া নেড়েছে। বোর্ড প্রধান ফারুক আহমেদের মতে, সম্ভাব্য বিকল্পগুলোর মধ্যে তারা সেরা মনে করছেন এই ক্যারিবিয়ান কোচকেই।
২০১৭ সালে চান্দিকা হাথুরুসিংহে দায়িত্ব ছাড়ার পর নতুন কোচ খুঁজছিল বিসিবি। সেই বছরের ডিসেম্বরে বিসিবিতে প্রেজেন্টেশন দিয়েছিলেন সিমন্স। দায়িত্বটি তখন পাননি তিনি। এবার সেই হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করেই তার হাতে দলকে সঁপে দিচ্ছে বিসিবি।
আপাতত স্রেফ মাস পাঁচেকের দায়িত্ব সিমন্সের। বুধবারই তার ঢাকায় আসার কথা। এই সোমবার থেকে শুরু হতে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ দিয়েই মেয়াদ শুরু ৬১ বছর বয়সী কোচের। থাকবেন ফেব্রুয়ারি-মার্চে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত।
ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের নানা আসরের এই সময়ে, যেখানে অল্প সময় কাজ করেই অনেক অর্থের হাতছানি, চাপ অনেক কম, এই যুগে বাংলাদেশের মতো দলের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ভালো মানের কোচ পাওয়া খুবই কঠিন। সেই বাস্তবতার কথা তুলে ধরলেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। তিনি বোর্ড প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার দুই মাসও হয়নি। এত অল্প সময়ে নতুন কোচ খোঁজার ঝক্কির কথাও শোনালেন।
শেষ পর্যন্ত সিমন্সের মানের একজন কোচ পেয়ে বেশ স্বস্তি পাচ্ছেন ফারুক।
“তিন-চারজন কোচের সঙ্গে কথা বলেছি, তার মধ্যে যাকে সেরা মনে হয়েছে… অনেক সময় হয় কী, আমি যেটা মনে করি, যখন আপনি কোচ হিসেবে সুপারস্টার, তখন কতটা মনোযোগ থাকে কাজে… তার চেয়ে বরং যারা সত্যিই পরিশ্রমী… তাকে (সিমন্স) আমি দেখেছি, কাজের ধরন… যখন জিম্বাবুয়ে খেলতে এসেছে, ব্যক্তিগতভাবে দেখা করেছি, কখনও আলোচনা করেছি যে, কীভাবে সে চিন্তা করে, কীভাবে অনুপ্রাণিত করে (দলকে), এসব দেখে আমার ভালো লেগেছে।”
“তার এজেন্টের সঙ্গেও কথা হয়েছে আমার। সব মিলিয়ে তাকেই সেরা বিকল্প মনে হয়েছে।”
১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ে ২৬ টেস্ট ও ১৪৩ ওয়ানডে খেলেছেন সিমন্স। ওপেনিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন পজিশনে ব্যাটিং করেছেন, সঙ্গে করতেন জেন্টল মিডিয়াম পেস বোলিং। সুইং করানোর সহজাত দক্ষতা তার ছিল। দারুণ প্রতিভাবান ও আগ্রাসী ছিলেন, তবে সেটির পুরোপুরি প্রতিফলন পড়েনি তার পারফরম্যান্স ও পরিসংখ্যানে।
তার একটি কীর্তি দারুণ স্মরণীয় হয়ে আছে এখনও। ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিডনিতে তার বোলিং ফিগার ছিল ১০-৮-৩-৪। ওয়ানডেতে ১০ ওভার বোলিং করে ৮ মেডেন নেওয়া ও কেবল ৩ রান দেওয়ার বিশ্বরেকর্ড অক্ষত আছে এখনও।
২০০২ সালে খেলা ছেড়ে দেওয়ার পরপরই কোচিংয়ে নাম লেখান তিনি। জিম্বাবুয়ের হারারেতে একটি একাডেমির হয়ে কোচিংয়ের শুরু। বছর দুয়েক পর জিম্বাবুয়ের জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পান। ২০০৭ সালে আয়ারল্যান্ডের কোচ হন তিনি।
আইরিশদের সবচেয়ে লম্বা সময়ের কোচ ছিলেন তিনি। ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চমকপ্রদ জয়সহ তার কোচিংয়ে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয় আয়ারল্যান্ডের।
২০১৫ সালে আইরিশদের দায়িত্ব ছেড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রধান কোচ হন সিমন্স। পরের বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় করে তার কোচিংয়েই। বিতর্ক জর্জরিত এলোমেলো দলকে এককাট্টা করে তোলার কৃতিত্বও দেওয়া হয়েছিল তাকে।
এই অধ্যায় শেষে আফগানিস্তানের ব্যাটিং কোচ ও পরে প্রধান কোচের ভার নেন তিনি ২০১৭ সালে। ২০১৯ সালে আরেক দফায় ফেরেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচের দায়িত্বে। এই দফায় তার শেষটা হয় ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ব্যর্থতা দিয়ে।
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে নানা দলের পরামর্শক, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে প্রধান কোচসহ নানা ভূমিকায় দেখা গেছে তাকে। এবার তার জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষায় বাংলাদেশে।
0 Comments