Home National এবার কি রাষ্ট্রপতি অপসারণ
এবার কি রাষ্ট্রপতি অপসারণ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দু’জন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হঠাৎ করে একই সঙ্গে দাবি জানিয়েছেন, মোঃ সাহাবুদ্দিনকে অবিলম্বে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অপসারণ করতে হবে। সরকার তাদের দাবি মেনে নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের পথে হাঁটবে কিনা, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন আনার দাবি সমন্বয়কদের নতুন না। দেখা গেছে, এর আগেও সমন্বয়করা দাবি তোলার পর বিভিন্ন পদে পরিবর্তন আসতে দেখা গেছে। আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে বলেছেন, তিনি এখনই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছেন না।
মূলত, বৃহস্পতিবার দুপুরে সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইল থেকে একটি পোস্টে সর্ব প্রথম এ দাবির কথা জানান। তার কয়েক ঘণ্টা পর সমন্বয় সারজিস আলমও তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইল থেকে একই কথা লিখে পোস্ট করেন। এর পরই এই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
তাদের দু’জনের পোস্টেই মোট পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের বাইরে বাকি চার দাবিগুলো হলো– আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিতকরণ, নতুন সংবিধান গঠন, আওয়ামী দুর্নীতিবাজ আমলাদের পরিবর্তন ও হাসিনার আমলে করা সব অবৈধ চুক্তি বাতিল।
ঠিক কী কী কারণে তারা হঠাৎ করে এসব দাবি, বিশেষ করে রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবি তুলেছেন, এ বিষয়ে জানতে শুক্রবার দিনভর উভয়ের সঙ্গেই একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের কেউই কোনো সাড়া দেননি। পরবর্তী সময়ে কথা হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদের সঙ্গে। তিনি জানান, তারা সবাই ওই দাবির সঙ্গে একমত।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আসলে ঠিক কী কারণে রাষ্ট্রপতির অপসারণ চাচ্ছে– এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘একটি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হইছে। তাই, ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্ধারিত রাষ্ট্রপতি থাকলে তা যে কোনো সময় রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠতে পারে। এই কারণে আমরা মনে করি, ওনাকে সহজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্ব-সম্মানে কীভাবে বিদায় দেওয়া যায়, সেদিকটা নিয়ে ভাবা উচিত। উনি ফ্যাসিজমের একটি সিম্বল। সেই সিম্বলটা থাকা উচিত না।’
বর্তমান রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে সবার কাছে ‘গ্রহণযোগ্য ও দেশপ্রেমিক’ রাষ্ট্রপতি চান তারা।
কোন প্রক্রিয়ায় অপসারণ করা হবে
এখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দাবি মেনে সরকার যদি সত্যিই রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে চায়, তবে তারা কোন পথ অবলম্বন করবে?
আইনজীবীরা বলছেন, এই মুহূর্তে সেটি একটি বড় প্রশ্ন হিসেবে দাঁড়াবে। কারণ, এই সরকারের আইনগত বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন আছে। সংবিধান অনুযায়ী সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে হয়। বাংলায় যাকে বলে, অভিশংসন। একাধিক সিনিয়র আইনজীবী মন্তব্য করেছেন, অভিশংসনের জন্য সংসদ লাগবেই। তবে রাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে তখন আর সংসদ লাগবে না বলে জানিয়েছেন তারা।
রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে এ দায়িত্ব কে পালন করবেন? এ বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রাষ্ট্রপতি যদি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন বা মৃত্যুজনিত কারণে পদ শূন্য হয়, তখন স্পিকার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন। তবে বাংলাদেশের বিদ্যমান রাষ্ট্র ব্যবস্থায় স্পিকার-সংসদ কোনোটাই নেই। স্পিকার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হলে পরবর্তী ৯০ দিনের মাঝে ওই সংসদ দ্বারাই নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। অতএব, রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের জন্য বৈধ কোনো পন্থা নেই।
তাহলে বর্তমান সরকার রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে পারবে কিনা এবং পারলে তা কীভাবে– এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী ওই সুযোগ নেই। রাষ্ট্রপতি এখন স্বেচ্ছায় বা কারও কথায় চলে যেতে পারেন। ক্ষমতায় যারা আছেন, তারা বললেই চলে যাবেন। সেনাবাহিনী ও সরকার চাইলে এক সেকেন্ডের ব্যাপার। এখানে লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। কারণ, ফর্মেশন অব গভর্নমেন্ট-ই তো লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কের মাঝে না। কাজেই ওই সুযোগ নেই। এখানে যা হবে, এমনিতে হবে। তবে এগুলোকে পরবর্তী সময়ে লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কের মাঝে অনুমতি দিতে হবে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও সিনিয়র আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম বলেন, এখন অস্বাভাবিক সরকার কাজ করছে। তাই সংবিধানের মাঝ দিয়ে বৈধতা-অবৈধতা সাংবিধানিক পদ্ধতিতে খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে সেটাও তারা কাভার করার জন্য আপিল বিভাগ থেকে একটি রেফারেন্স করে নিয়ে আসছে। এখন পর্যন্ত তারা সংবিধানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে চলার চেষ্টা করছেন। তাই, অন্তর্বর্তী সরকারের এই রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের পদ্ধতি কী হবে, সেটার জন্য তাদের এখন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে রেফারেন্স নিতে হবে।
0 Comments